
বিপাশা হায়াত। বাবা আবুল হায়াত গুণী অভিনেতাদের একজন। তাই বলে স্বামী তৌকির আহমেদকেও পিছনে রাখার সুযোগ নেই। অভিনয়শিল্পী পরিচয়ের পাশাপাশি এখন তিনি নাট্য ও চলচ্চিত্র পরিচালকও। বিপাশার ছোট বোন নাতাশা হায়াতও কম যান না। একাত্তরের যুদ্ধ মাথায় নিয়ে জন্ম নেয়া বিপাশা বাংলাদেশ টেলিভিশনের মঞ্চ অভিনয়েও বেশ নাম করেছিলেন। নব্বইয়ের দশকের প্রিয় এই শিল্পী বিয়ের পর মঞ্চনাটকের অভিনয় থেকে নিজেকে গুঁটিয়ে নিয়েছেন। ইদানিং টিভি নাটকেও খুব একটা দেখা যায় না তাকে। কী করছেন তিনি? ‘ঘর সংসারে সময় দিচ্ছি। কাজও করছি, নিজে অভিনয় খুব একটা না করলেও নির্মাণ করছি।’ বললেন বিপাশা হায়াত।
জানা গেছে, গাজীপুরে বিপাশা-তৌকিরের একটি রিসোর্ট রয়েছে। নাম রেখেছেন নক্ষত্রবাড়ি। নিজেদের নাটকগুলোর চিত্রায়ণ বেশিরভাগ সময়ই করেন সেখানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে স্নাতক শেষ করা গুণীশিল্পী বিপাশা মাঝেমধ্যে ছবিও আঁকেন। অভিনয়জীবনে দুটি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। বেশ জনপ্রিয়তাও পেয়েছে ছবি দুটি। একটি ছিল প্রয়াত কথার জাদুকর হুমায়ূন আহমেদের আগুনের পরশমনি। তার পর দীর্ঘ বিরতি। সবশেষ স্বামী তৌকিরের পরিচালনায় জয়যাত্রা।
বিপাশা বলেন, ‘অনেক চরিত্রে দর্শকের সামনে গিয়েছি। অভিনয়ের মধ্য দিয়ে মানুষ আমায় আপন করে নিয়েছে। ঢালাওভাবে কাজ করে নিজের অর্জনকে বিসর্জন দিতে চাই না। তাই একটু বেছে কাজ করার চেষ্টা করি। শত হলেও মানুষের কাছে একটি দায়বদ্ধতা আছে, তাই না।’
অভিনয়শিল্পী হিসেবেই সবার কাছে সমাদৃত শমী কায়সার। কিন্তু লেখিকা পরিচয়টি এখনও অনেকের অজানা। কেউ জানুক বা না জানুক ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বইও প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। ভালোবাসায় ভিজে ভিজে, বুবলি, লাল গোলাপ, আর কতদূরসহ সাতটিরও বেশি বই বেরিয়েছে তাঁর। গুণী অন্যদের মতো তিনিও এসেছেন মঞ্চ থেকে। মঞ্চ ধরে রাখলেও টিভি নাটকে ইদানিং খুব একটা দেখা যায় না শমীকে। কারণটা জানালেন তিনি নিজেই। ‘শোবিজেই তো আছি। উপস্থাপনা করছি। নাটক, অনুষ্ঠান বানাচ্ছি। ধানসিঁড়ি নামে আমার একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ধানসিঁড়িকে অনেক বড় করতে চাই।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বড়সড় ইভেন্ট ম্যানেজের কাজও করেন শমী কায়সার।
শহীদ বুদ্ধিজীবী শহীদুল্লাহ কায়সার এবং সাবেক সংসদ সদস্য পান্না কায়সারের সন্তান শমী কায়সার প্রথম ঘর বেঁধেছিলেন ১৯৯৯ সালে। ভারতীয় নির্মাতা রিঙ্গোকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন তখনকার জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। তবে মাত্র দুই বছর আয়ু ছিল এই দাম্পত্য জীবনের। পরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক মোহাম্মদ এ আরাফাতের সঙ্গে দ্বিতীয়বার গাঁটছড়া বাঁধেন তিনি।
খুব ঠাণ্ডা মেজাজের অভিনয়শিল্পী সুবর্ণা মোস্তফা। বাবা গোলাম মোস্তফা ছিলেন নামকরা অভিনেতা। বোন ক্যামেলিয়া মোস্তফাও অভিনয়ে দক্ষতার ছোঁয়া রেখেছেন অতীতে। দেশের নাট্যজগতে সুবর্ণা এক বিশেষ স্থান আগলে আছেন। আশির দশকে তিনি ছিলেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় টিভি অভিনেত্রী। বিশেষ করে আফজাল হোসেন এবং হুমায়ূন ফরীদির সাথে তার জুটি ব্যাপক দশক সমাদর লাভ করে। সুবর্ণা মঞ্চ এবং চলচ্চিত্রেও প্রচুর অভিনয় করেছেন। তবে ইদানিং খুব কম নাটকেই দেখা যায় তাকে।
শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে ডিগ্রী নেয়া সুবর্ণা ১৯৮০ সালে সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী পরিচালিত ‘ঘুড্ডি’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্র জগতে আসেন।তবে তিনি নিয়মিত গড়পড়তা চলচ্চিত্রে অভিনয় করেননি। কিছু জীবন ঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন।তবে মূলধারার কিছু সিনেমাতেও তাঁর উপস্থিতি লক্ষ্যণীয়।‘নয়নের আলো’ সিনেমাতে তাঁর অভিনয় সব শ্রেণীর দর্শককে নাড়া দিয়েছিল।দর্শকদের মাঝে ছিল তাঁর ঈর্ষনীয় জনপ্রিয়তা।
সুবর্ণার ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, নির্মাতা স্বামী বদরুল আনাম সৌদের কাজে সহযোগিতা করছেন সুবর্ণা। নিজের দীর্ঘ অভিনয় জীবনের অভিজ্ঞতার পুরোটুকুই দিতে চান স্বামীর কাজে। তাই অন্যকাজে সময় পান খুব কম।
মিষ্টি হাসির সেই মেয়েটিকে এখন আর টিভি পর্দায় দেখা যায় না বললেই চলে। পর্দার আড়ালে চলে গেছেন তিনি। বলছিলাম আফসানা মিমির কথা। অভিনয় আর পরিচালনা উভয় জায়গাতেই সুনাম রয়েছে তাঁর। হাসিখুশি, আড্ডাবাজ আর প্রাণবন্ত মানুষ তিনি। বহু বাধাবিঘ্ন এসেছে তার চলার পথে, কিন্তু কখনই থমকে যাননি। অভিনেত্রী হিসেবে যেমন পেয়েছেন জনপ্রিয়তা, নির্মাতা হিসেবেও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। একসময় টিভিপর্দায় নিয়মিত অভিনয় করলেও এখন নেপথ্যের কাজকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন। অভিনয় করছেন খুব কম। মিমির অভিনয়ে হাতে খড়ি মঞ্চ দিয়ে। ১৯৮৬ সালে ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠীর হয়ে প্রথম মঞ্চে ওঠেন তিনি। অভিনয় করেন মনোজ মিত্রের ‘রাজদর্শন’ নাটকের রানী চরিত্রে। নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছিলেন প্রয়াত সৈয়দ মহিদুল ইসলাম। একই নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য গাজী রাকায়েতের মাধ্যমে পরবর্তীকালে তিনি নাগরিক নাট্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে যুক্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধের গল্প নির্ভর ছবি ‘রান’। ছবিটি পরিচালনা করেছেন অভিনেত্রী আফসানা মিমি। এই ছবির মাধ্যমেই পরিচালকের খাতায় নাম লেখালেন তিনি। এতে অভিনয় করেছেন আফজাল হোসেন এবং মেঘনা। কৃষ্ণচূড়া নামে একটি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি তাঁর।
আফসানা মিমি বলেন, ‘অনেক তো অভিনয় হয়েছে। নতুনরা এসেছে। তাদেরও তো সুযোগ করে দিতে হবে। পরিচালনা করছি। ভালই আছি। অভিনেত্রীর পাশাপাশি পরিচালক হিসেবেও দর্শকের ভালবাসা পেতে চাই।’